পদার্থবিদ্যা - পদার্থবিজ্ঞান – ২য় পত্র - আলোর ব্যতিচার

 সুসঙ্গত উৎস (Coherent Source

দুটি উৎস থেকে সমদশায় বা কোনো নির্দিষ্ট দশা পার্থক্যের একই তরঙ্গদৈর্ঘ্যের দুটি আলোক তরঙ্গ নিঃসৃত হলে তাদের সুসঙ্গত উৎস বলে ।

সাধারণভাবে দুটি আলাদা আলোক উৎসকে সুসঙ্গত উৎস হিসেবে গণ্য করা যায় না, কেননা যে কোনো একটি উৎসের পরমাণু কর্তৃক নিঃসৃত আলোক তরঙ্গ অন্য উৎসের ওপর কোনোভাবেই নির্ভর করে না। তাই দুটি ভিন্ন উৎস থেকে নির্গত দুটি আলাদা আলোক তরঙ্গ একটি নির্দিষ্ট দশা সম্পর্ক বজায় রাখতে পারে না। আলোর ব্যতিচার সংক্রান্ত পরীক্ষা নিরীক্ষায় সাধারণত একটি উৎস থেকে নির্গত আলোকে দুটি অংশে এমনভাবে বিভক্ত করা হয় যেন প্রতিটি বিভক্ত অংশকেই একটি স্বতন্ত্র উৎস হিসেবে গণ্য করা যায়। ফলে এই দুটি বিভক্ত অংশকে দুটি সুসঙ্গত উৎস হিসেবে বিবেচনা করা যায়। আলোক তরঙ্গকে দুটি সরু পথে বা চিরের (slit) মধ্য দিয়ে যেতে দিয়ে একটি উৎস থেকে দুটি সুসঙ্গত উৎস তৈরি করা যায়।

কোনো স্থানে দুই বা ততোধিক আলোক তরঙ্গের উপরিপাতনের ফলে আলোর তীব্রতা তথা আলোক শক্তির পরিবর্তনের ঘটনাকে আলোর ব্যতিচার বলা হয়। দুটি উৎস থেকে নির্গত অভিন্ন দুটি তরঙ্গ (অর্থাৎ একই তরঙ্গদৈর্ঘ্য তথা কম্পাঙ্ক ও বিস্তারবিশিষ্ট দুটি তরঙ্গ) কোনো বিন্দুতে একে অপরের ওপর আপতিত হলে ঐ বিন্দুতে লব্ধি তীব্রতা যে কোনো একটি তরঙ্গের তীব্রতার চেয়ে বেশি বা কম হতে পারে। এই ঘটনাই তরঙ্গের ব্যতিচার । যখন লব্ধি তীব্রতা আলাদা আলাদা তরঙ্গের তীব্রতার চেয়ে বেশি হয় তখন তাকে গঠনমূলক ব্যতিচার আর যদি লব্ধি তীব্রতা আলাদা আলাদা তীব্রতার চেয়ে কম হয় তাকে ধ্বংসাত্মক ব্যতিচার বলে ।

   দুটি সুসঙ্গত উৎস থেকে নিঃসৃত দুটি আলোক তরঙ্গের উপরিপাতনের ফলে কোনো বিন্দুর আলোক তীব্রতা বৃদ্ধি পায় আবার কোনো বিন্দুর তীব্রতা হ্রাস পায়। এর ফলে কোনো তলে পর্যায়ক্রমে আলোকোজ্জ্বল ও অন্ধকার অবস্থার সৃষ্টি হয়। কোনো স্থানে বিন্দু থেকে বিন্দুতে আলোর তীব্রতার এই পর্যায়ক্রমিক তারতম্যকে আলোর ব্যতিচার বলে।

ধরা যাক, একই বিস্তার ও তরঙ্গদৈর্ঘ্য তথা কম্পাঙ্কবিশিষ্ট দুটি আলোক তরঙ্গ একই রেখা বরাবর কোনো স্থানে অগ্রসর হচ্ছে। কোনো বিন্দুতে তরঙ্গদ্বয় একই দশায় পৌঁছালে (অর্থাৎ ঐ বিন্দুতে উভয় তরঙ্গের তরঙ্গ চূড়া বা তরঙ্গ খাঁজ আপতিত হলে) ঐ বিন্দুতে লব্ধি বিস্তার তরঙ্গদ্বয়ের বিস্তারের সমষ্টির সমান হবে। অপরপক্ষে, কোনো বিন্দুতে তরঙ্গদ্বয় যদি বিপরীত দশায় মিলিত হয় (অর্থাৎ ঐ বিন্দুতে একটি তরঙ্গের তরঙ্গ চূড়া অপর তরঙ্গের তরঙ্গ খাঁজের সাথে মিলিত হয়) তবে ঐ বিন্দুর লব্ধি বিস্তার শূন্য হবে। যেহেতু আলোর তীব্রতা বিস্তারের বর্গের সমানুপাতিক সেহেতু প্রথমোক্ত বিন্দুতে তীব্রতার মান বেড়ে যাবে এবং শেষোক্ত বিন্দুতে এই মান শূন্য হবে। এর ফলে ঐ স্থানের কোনো তলে পরপর আলোকোজ্জ্বল ও অন্ধকার অবস্থার সৃষ্টি হয় অর্থাৎ ব্যতিচার হয়।

গঠনমূলক ব্যতিচার (Constructive Interference) : দুটি উৎস থেকে নিঃসৃত কিন্তু একই তরঙ্গদৈর্ঘ্য এবং সমান বা প্রায় সমান বিস্তার বিশিষ্ট দুটি আলোক তরঙ্গের উপরিপাতনের ফলে কোনো বিন্দুর ঔজ্জ্বল্য বেড়ে গেলে অর্থাৎ আলোক তীব্রতা বৃদ্ধি পেলে তাকে গঠনমূলক ব্যতিচার বলে।

ধ্বংসাত্মক ব্যতিচার (Destructive Interference) : দুটি উৎস থেকে নিঃসৃত কিন্তু একই তরঙ্গদৈর্ঘ্য এবং সমান বা প্রায় সমান বিস্তারবিশিষ্ট দুটি আলোক তরঙ্গের উপরিপাতনের ফলে কোনো বিন্দু অন্ধকার বা প্রায় অন্ধকার হয়ে গেলে তাকে ধ্বংসাত্মক ব্যতিচার বলে।

ব্যতিচারের শর্ত :

১। আলোর উৎস দুটি সুসঙ্গত হতে হবে।

২। যে দুটি তরঙ্গ ব্যতিচার ঘটাবে তাদের বিস্তার সমান বা প্রায় সমান হতে হবে।

৩। উৎসগুলো খুব কাছাকাছি অবস্থিত হতে হবে।

৪। উৎসগুলো খুব সূক্ষ্ম হতে হবে।

চির বা স্লিট (Slit) : দৈর্ঘ্যের তুলনায় খুবই ক্ষুদ্র প্রস্থবিশিষ্ট আয়তাকার সরু ছিদ্রকে চির বলে। ব্যতিচারের জন্য চিরের প্রস্থ আলোর তরঙ্গদৈর্ঘ্যের ক্রমের হতে হয় । 

ব্যতিচার ঝালর (Interference Fringe) : 

 কোনো তলের বা পর্দার ওপর আলোর ব্যতিচার ঘটানো হলে সেখানে অনেকগুলো পরপর সমান্তরাল উজ্জ্বল আলোক রেখা বা পট্টি (band) এবং অন্ধকার রেখা বা পট্টি পাওয়া যায় । এই আলোকিত ও অন্ধকার ডোরাগুলোকে (fringe) ব্যতিচার ঝালর বলে ।

Content added || updated By

Promotion